বশির আল-মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ক্ষীরা চাষে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক চাষীরা। এ কারণে খিরা চাষের পরিধিও বেড়েই চলেছে। আগাম খিরা চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে যেমনি আগ্রহ বাড়ছে তেমনি বাম্পান ফলন ও ন্যায্য দাম পেয়ে ভালো লাভবানও হচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ২২০ একর জমিতে ক্ষীরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ একর জমিতে আগাম জাতের খিরা চাষ হয়েছে। উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, ইছাখালী, দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া, ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়নে খিরা চাষ হয় বেশি। এর মধ্যে আগাম চাষে এগিয়ে হিঙ্গুলী ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নের কৃষকেরা।
উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অন্য শীতকালীন সবজির পাশাপাশি জমিতে ক্ষীরার আবাদ করেছেন একাধিক চাষি। ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন ওই গ্রামের কৃষকেরা। এলাকার কৃষক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ১ একর জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছেন। পাশাপাশি টমেটো চাষ করেছেন আরও ১ একর জমিতে।
কৃষক নিজাম উদ্দিনের ছেলে আবু নোমান বলেন, ‘এবার প্রায় ১ একর জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছি। প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে বিক্রি শুরু করেছি। প্রায় ৩ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও ৪-৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে টমেটো বিক্রি শুরু হবে।’
খৈয়াছড়া এলাকার কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এ বছর ২৫ শতক জমিতে ক্ষীরা চাষ করেছি। গত ৭-৮ বছর ধরে অনেকেই খিরা আবাদ করছেন। আমার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আরও প্রায় দেড় মাস বিক্রি করা যাবে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো।’
আরেক চাষি নুরুল হুদা বলেন, ‘এবার ২০ শতক জমিতে ক্ষীরা আবাদ করেছি। আগাম চাষ করায় ভালো দাম পেয়েছি। শুরুতে প্রতি কেজি খিরা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন পাইকারি বিক্রি করছি ৪০-৪৫ টাকা দরে।’
এখানকার ক্ষীরা ফেনী, সীতাকুণ্ড, বারইয়ারহাট, ছাগলনাইয়া, চট্টগ্রাম শহরে পাইকারি ব্যবসায়িরা নিয়ে যায়। উপজেলার বড়দারোগাহাট, মিঠাছড়া, বড়তাকিয়া, মিরসরাই সদর, বারইয়ারহাট, করেরহাট বাজারে পাইকারি বিক্রি করা হয়।
খুচরা ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মিরসরাইয়ে উৎপাদিত ক্ষীরা তুলনামূলক অন্য এলাকার খিরার চেয়ে মিষ্টি। তাই বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। আমি প্রতি বছর হিঙ্গুলী ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নে উৎপাদিত খিরা কিনে খুচরা বিক্রি করি।’
খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, ‘খৈয়াছড়া ইউনিয়নের কৃষকেরা গত ১০-১২ বছর ধরে আগাম ক্ষীরা চাষ করে আসছেন। আগাম ফলন লাভজনক হওয়ায় দিন দিন চাষের পরিধি বাড়ছে।’
মিরসরাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার মাটি ক্ষীরা চাষের জন্য উপযোগী। আগাম উৎপাদিত খিরার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার ক্ষীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।’
Leave a Reply